ফ্ল্যাশব্যাক – (শ্যালো ইনসান হাতির কথাগুলি ভাবতে থাকে। …….কিছুদূর যেতেই সে একটা উট দেখতে পায়। ………. )
উট কে দেখেই শ্যালো ইনসানের হাত নিজের অজান্তেই উপরে উঠলো।
শ্যাই: আস-সালামুয়ালাইকুম।
উট: ওয়ালাইকুম-আসসালাম। কি ব্যাপার, হঠাৎ করে আমার কাছে?
শ্যাই: তোমাকে দেখে একটা গল্প মনে পড়লো। সেটা শেয়ার করতে ইচ্ছা করছে।
উট: বলো, শুনি তোমার গল্পটা।
শ্যাই: অনেক দিন আগে, আরবের বেদুইন যারা মরুভূমিতে বাস করতো, তারা একদিন কিছু ভেড়া ও ঘোড়া নিয়ে মরুভূমির পথ পাড়ি দিয়ে তাবুক শহরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলো। তাবুক আরবের হিজাজ অঞ্চলে পাহাড়ের মাঝে একটা শহরের নাম। সেখানে ইহুদি জাতির বাস ছিল। তারা সেখানে ছাগল, ভেড়া চালাতো এবং তা দিয়ে জীবিকা অর্জন করতো। তাদের উট ছিল কিন্তু তারা উটকে তাঁবুর পাশে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখতো।
বেদুইনরা সেখানে ইহুদিদের দেখা পেলো। বেদুইনদের ভেড়া আর ঘোড়া দেখে ইহুদিদের লোভ লাগলো। তারা উটের বিনিময়ে ভেড়া ও ঘোড়া নিতে চাইলো। একজন বৃদ্ধ ইহুদি তার গোত্রের লোকদের বললো, উঠ আমাদের মরুভূমির তপ্ত গরম পথে পারি দেয়ার একমাত্র সম্বল। তাই উট দেওয়া ঠিক হবে না। গোত্রের বেশিরভাগ লোকেরা বললো, অসুবিধা কি? আমরা তো ঘোড়া পাচ্ছি। তাছাড়া আমরা বোতলে করে কিছু পানি তাঁবুর পাশে রাখবো। তাহলে উট আবারো চলে আসবে।
ইহুদিরা বেদুঈনদের প্রস্তাব দিলো, তারা যদি ভেড়া ও ঘোড়ার বিনিময়ে উট নিতে চায় । বেদুঈনদের কোনো উট ছিলোনা। তারা নিজেদের ভিতর শলাপরামর্শ করলো। অবশেষে তারা ইহুদিদের প্রস্তাবে রাজি হলো। তারা ভেড়া ও ঘোড়ার বিনিময়ে উট নিয়ে তাদের যাত্রা শুরু করলো। সেই থেকে উঠ হয়ে গেলো আরব বেদুঈনদের পথের সাথী। আর ইহুদিরা বোতলে পানি ভোরে তাঁবুর পাশে রেখে দিলো এই আশায় যে একদিন উট পানি খেতে তাদের কাছে আসবে। আজও কিছু পাইনি, তবে তারা অপেক্ষারত।
উট: হুম, আমরা পানি খাই শত লিটারের বেশি, আর তারা বোতলে পানি রেখে আমাদের অপেক্ষা করছে। মস্করা করে।
শ্যাই: একটা কথা জিজ্ঞাসা করতে চাই।
উট: বলো, কি জানতে চাও।
শ্যাই: পবিত্র কোরআনে তোমার কথা অনেক বার বলা হয়েছে। তোমার কাছ থেকে আমাদের জন্য কি শিক্ষা আছে?
উট: ঠিক আছে, বলবো। তার আগে তুমি বলো কোরআনে কতবার এবং কি কি নামে আমাকে উল্লেখ করা হয়েছে?
শ্যাই: পবিত্র কোরআনে মোট ১৫ আয়াতে ১৫ বার তোমার নাম উল্লেখ আছে। ২ বার ইবল [৬:১৪৪, ৮৮:১৭], ২ বার জামাল [৭:৪০, ৭৭:৩৩], ৭ বার নাকাত [৭:৭৩, ৭:৭৭, ১১:৬৪, ১৭:৫৯, ২৬:১৫৫, ৫৪:২৭, ৯১:১৩] , ১ বার ইশার [৮১:৪], ১ বার বাইরিন [১২:৭২], ১ বার আলহিম [৫৬:৫৫], ১ বার রিকাব [৫৯:৬] নামে।
উট: হুম, অনেক কোরআন পড়ো বলে মনে হচ্ছে? ভালো, ভালো।
শ্যাই: না, না, তেমন না। এখন ইন্টারনেটের যুগ, অনলাইন ঘাটলেই অনেক কিছু জানা যায়।
উট: ও আচ্ছা, বুঝতে পেরেছি। আমার নাম ইবল, ফেমিনিন (feminine) বৈশিষ্ট বুঝানোর জন্য নাকাত ও ইশারু শব্দটি, আর একটি মাস্কুলিন (masculine) বৈশিষ্ট বুঝানোর জন্য জামাল শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। আর বাকি নামগুলা বেশি বা অধিক (high, big, more) ইত্যাদি অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। সুতরাং গুরুত্বপূর্ণ নাম গুলা হচ্ছে ইবল, নাকাত ও জামাল।
আমি, অর্থাৎ উট (ইবল) একবার পানি পান করলে তা শরীরে জমা রেখে অনেক মাস পর্যন্ত ব্যবহার করতে পারে। এমন দেখা যায় যে, উট ৭ মাস পর্যন্ত চলতে পারে পানি পান ছাড়া। সমস্ত প্রাণীর মধ্যে উট সবথেকে সঠিক ভাবে এবং প্রয়োজনমতো পানি ব্যবহার করে। পানিকে আল কোরআনে ঐশ্বরিক অনুপ্রেরণা (Divine Inspiration) হিসাবে বুঝানো হয়েছে। উট অনেক শান্ত, প্রচন্ড ধৈর্যশীল ও যাত্রার পথে অঙ্গীকারবদ্ধ। মরুভূমির তপ্ত গরমের সুদীর্ঘ পথে কখনও অশান্ত হয়না ও ধৈর্য্য হারায় না।
শ্যাই: বুঝলাম। তাহলে আল-কোরআন এ “তারা কি উটের (ইবল) দিকে তাকায় না – তারা কিভাবে সৃষ্টি হয়েছে ? [৮৮:১৭]” । এই আয়াত থেকে আমাদের জন্য কি শিক্ষা আছে ?
উট: উট কে এমন ভাবে তৈরী করা হয়েছে যে সে পানি (ঐশ্বরিক অনুপ্রেরণা) ও খাদ্য ধরে রাখতে পারে দীর্ঘ সময় এবং প্রয়োজনমতো ব্যবহার করে মরুভূমির তপ্ত গরমের দীর্ঘ পথ পারি দেয়। উট শান্ত, খুব ধৈর্যশীল, যাত্রার গন্তব্যের পথে অঙ্গীকারবদ্ধ। উটের চলার পথকে দুনিয়ার চলার পথের সাথে তুলনা করা হয়েছে। মানুষের জন্য দুনিয়ার জীবনের সঠিক ও সত্য পথটা মরুভূমির তপ্ত গরম পথের মতো কষ্টের। দুনিয়ার জীবনে চলার পথে আল্লাহর দেয়া বিধান (ঐশ্বরিক অনুপ্রেরণা) নিয়ে চলবে, তা না হলে মৃত্যুর পরে পরকালে তপ্ত গরমে পুড়বে। মানুষকে দুনিয়ার জীবনে শান্ত, ধৈর্যশীল, গন্তব্যের প্রতি বিশ্বাস ও যাত্রার পথে অঙ্গীকারবদ্ধ থাকার উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
আবার এভাবে চিন্তা করো, ইবল যে পথ দিয়ে চলে, সেই পথে চলাকে আমরা যদি ইবল+ইস বলি, তাহলে সেটার অর্থ দাঁড়ায় ইবলিস (ইবল+ইস). মরুভূমির তপ্ত গরমের পথ হচ্ছে ইবলের পথ অর্থাৎ ইবলিস। তোমাদের দুনিয়ার চলার পথ ইবলিসের সমতুল্য। শয়তান এই পথে ঘুরে বেড়াই, তোমাদের জন্য অপেক্ষামান থাকে এবং তোমাদেরকে সে তার অনুপ্রেরণা (ওয়াসওয়াসা) দেয়। শয়তানের অনুপ্রেরণা হচ্ছে মরুভূমির মরীচিকার মতো। শয়তানের অনুপ্রেরণার (মরীচিকার) মধ্যে মানুষ জীবনের আসার আলো দেখে প্রলোভিত হয়। অথচ শয়তানের অনুপ্রেরণা ধোঁকা ছাড়া আর কিছুই না। মরীচিকা যেমন মানুষকে পানির প্রলোভন দেখিয়ে তৃষ্ণার্ত অবস্থায় মরুভূমির তপ্ত গরম পথে ঘোরায়। তেমনি ভাবে শয়তানের অনুপ্রেরণা সফলতার প্রলোভন দেখিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করে জীবনে অতৃপ্ত ও অস্থিরতার পথে ঘোরায়।
তাই উট থেকে তোমাদের শিক্ষা হচ্ছে, (১) তোমরা জীবনে চলার পথে আল্লাহর দেয়া ঐশ্বরিক অনুপ্রেরণা নিয়ে চলবে। দুনিয়ার সঠিক ও সত্য পথটা অনেক কঠিন ও কষ্টের। সে পথে চলার সময়ে শান্ত থাকবে, ধৈর্যশীল হবে, গন্তব্যের প্রতি বিশ্বাস রাখবে ও যাত্রার অঙ্গীকার রক্ষা করে চলবে। দুনিয়ায় চাকচিক্য অথবা বিভিন্ন স্রষ্টা বিহীন দর্শন বা মতাদর্শ তোমাদের প্রলোভিত করবে, শয়তানের অনুপ্রেরণা যেটা মরুভূমির মরীচিকার মতো। এই সকল মতাদর্শ বা দুনিয়ায় চাকচিক্য তোমাদেরকে বিভ্রান্ত করবে, অতৃপ্ত ও অস্থিরতার পথে ঘোরাবে। একমাত্র আল্লাহর দেওয়া অনুপ্রেরণা ও হেদায়েত তোমাদেরকে প্রকৃত সঠিক ও সত্য পথের গন্তব্যে নিয়ে যাবে, দুনিয়ার জীবনে তৃপ্তি ও স্থিরতা দান করবে ও পরকালে তপ্ত গরম থেকে রক্ষা করবে।
শ্যাই: হুম, বুঝতে পেরেছি। এটাতো অনেক বড় শিক্ষা। …তাহলে জামাল ও নাকাত নাম দ্বারা কি বুঝানো হয়েছে?
উট: এই পৃথিবীর সৃষ্টির সব কিছুর মধ্যে মাস্কুলিন (Masculine) এবং ফেমিনিন (Feminine) বৈশিষ্ট্য আছে, তাদের সম্পর্কের উপর ভিত্তি করে। তবে এটা শুধু যৌন পুংলিঙ্গ ও স্ত্রীলিঙ্গ অর্থে বোঝায়, তা না। মাস্কুলিন এবং ফেমিনিন আরও অনেক ব্যাপক অর্থে ব্যবহার হয়, যেমন সূর্য কে মাস্কুলিন ও পৃথিবীকে ফেমিনিন। তোমাদের ‘চিন্তা’ কে মাস্কুলিন এবং ‘আবেগ’ কে ফেমিনিন বলা হয়। মাস্কুলিনের বৈশিষ্ট্য – ইন্ডিপেন্ডেন্ট (স্বতন্ত্র), দাতা, যারা কাজ করে (who act upon) এবং ফেমিনিন বৈশিষ্ট্য হচ্ছে – ডিপেন্ডেন্ট (নির্ভরশীল), গ্রহীতা, যার উপর কাজ করা হয় (whom acted upon).
শ্যাই: থামো, থামো। তুমি কি প্রিন্সিপল অফ জেন্ডার (Principle of Gender) এর কথা বলছো?
উট: হ্যা। তবে আমি এই প্রিন্সিপল অফ জেন্ডার টা আমার নাম জামাল ও নাকাত শব্দে কি ভাবে প্রযোজ্য সেটা বুঝি। এর বেশি কিছু আমি বুঝিনা।
শ্যাই: এটা কি প্রাচীন ৭ হারমেটিক প্রিন্সিপলস (Hermetic Principles) এর একটা প্রিন্সিপল?
উট: হ্যা এবং না। এটা হারমেটিক প্রিন্সিপলস (Hermetic Principles) এর একটা প্রিন্সিপল সেটা ঠিক। কিন্তু এর অর্থ ও ব্যাখ্যা কোনোটারই যথার্থ বিশ্লেষণ নাই। ইব্ন আল আরাবি (বারোশো শতাব্দীর একজন মুহাক্কিক ) তার বই ফুতুহত আল মাক্কিয়া (Futuhat Al Makkiyya) এ আল্লাহতালা কিভাবে সব সৃষ্টি করেছেন এবং সৃষ্টির বিবর্তন ও এর মধ্যে সম্পর্ক ইত্যাদি বিষয়ে বিশদ আলোচনা করেছেন। প্রিন্সিপল অফ জেন্ডার এর মূল ব্যাখ্যা আছে “ফুতুহত আল মাক্কিয়া” যার ইংলিশ ট্রান্সলেশন বই “The Self Disclosure of God”।
শ্যাই: তুমি এগুলো জানলে কিভাবে?
উট: কিছু দিন আগে আমার সাথে দেখা করতে আসেন এক ব্যক্তি, নাম নুরুল হুদা। উনি এগুলো খুব ভালো বোঝেন। উনার কাছে গেলে তুমি বিস্তারিত বুঝতে পারবে।
শ্যাই: ঠিক আছে। উনার ফোন নম্বরটা আমাকে দাও?
উট: দুঃখিত। আমার কাছে উনার কোনো ফোন নম্বর নাই।
শ্যাই: আচ্ছা, এই আয়াতে, “নিশ্চয়ই যারা অস্বীকার ও অহংকারের সাথে আমাদের আয়াতসমূহ গ্রহণ করে, তাদের জন্য বেহেশতের দরজা খোলা হবে না, অথবা তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না যতক্ষণ না একটি উট (জামাল) একটি সূঁচের ছিদ্র দিয়ে অতিক্রম করে… [7:40]” এখানে উটের (জামাল) উদাহারন দিয়ে কি বুঝানো হয়েছে?
উট: বলবো। তার আগে বলো, তুমি কি বুঝেছো?
শ্যাই: উটের আকার অনেক বড় তাই তার পক্ষে সূঁচের ছিদ্র দিয়ে প্রবেশ করা অসম্ভব। এখানে একটা অসম্ভব ব্যাপারকে বোঝানো হয়েছে।
উট: তোমার নাম কি?
শ্যাই: শ্যালো ইনসান।
উট: বুঝেছি। তোমার উপলব্ধি ও অনুমান ঠিক আছে, তবে এটা শ্যালো উপলব্ধি। এখন বলো, এখানে উট কেন? হাতি বা অন্য কোনো বড় প্রাণীর উদাহরণ দেওয়া হলো না কেন?
শ্যাই: সেটা তো কখনো ভাবিনি? আল্লাহ ভালো জানেন।
উট: বুঝেছি। উটকে তুলনা করা হয়েছে সেই সকল মানুষের সাথে যারা জীবনে চলার পথে আল্লাহর দেয়া ঐশ্বরিক অনুপ্রেরণা ও হেদায়েত নিয়ে চলে। তারা দুনিয়ার জীবনে একমাত্র আল্লাহর উপর ভরসা করে, শান্ত থাকে, খুব ধৈর্যশীল, গন্তব্যের প্রতি বিশ্বাস রাখে ও যাত্রার পথে অঙ্গীকারবদ্ধ থাকে। এখানে জামাল শব্দ দিয়ে এই সকল মানুষেকে বুঝানো হয়েছে, তাদের ওই সকল গুণাবলী যেটা তাদের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। “জামাল” শব্দের আক্ষরিক অর্থ ‘সুন্দর’। এক কোথায় আল্লাহর হেদায়াত প্রাপ্ত ব্যক্তি, সুন্দর ব্যক্তি।
“জামাল” শব্দটা যেহেতু মাস্কুলিন (masculine) হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে। তাই এখানে ওই সকল মানুষের বা ব্যক্তির একটা বৈশিষ্ট্য বুঝানো হয়েছে। বৈশিষ্ট্যটা হচ্ছে তারা মানুষের কাছে আল্লাহর বাণী পৌঁছায় দেয় অর্থাৎ আল্লাহর পথে আহবান করে। সুতরাং এখানে জামাল বলতে বুঝানো হয়েছে সে সকল মানুষ বা ব্যক্তি যারা আল্লাহর হেদায়াত প্রাপ্ত, জীবনের সবকিছুতে আল্লাহর উপর ভরসা করে এবং অন্য মানুষদেরকে আল্লাহর পথে আহবান করে।
শ্যাই: ঠিক আছে, জামাল শব্দের অর্থ বুঝলাম। কিন্তু, জামালের সূঁচের ছিদ্র দিয়ে প্রবেশ করা অসম্ভব, এর মানে কি?
উট: “সূঁচের ছিদ্র” বলতে দুনিয়ার স্বার্থ কে বুঝানো হয়েছে। যে জামাল সে কখনো তার দুনিয়ার স্বার্থে মানুষকে আল্লাহর পথে আহবান করে না। অর্থাৎ যে মানুষ আল্লাহর হেদায়াত প্রাপ্ত, জীবনের সবকিছুতে আল্লাহর উপর ভরসা করে, সে কখনো নিজের স্বার্থে মানুষকে আল্লাহর পথে আহবান করেনা। এটা একটা অসম্ভব ব্যাপার। অন্যভাবে বললে, এভাবে বলা যায়, যে দুনিয়ার জীবনের স্বার্থে মানুষকে আল্লাহর পথে আহবান করে সে কখনো আল্লাহর প্রকৃত হেদায়াত প্রাপ্ত হয় না।
শ্যাই: একটু ডাইজেস্ট করতে দাও। ……আচ্ছা, তো, আমাদের অনেক আলেম সাহেব ও মুসলিম স্কলার আছে যারা হেলিকপ্টারে বা কোনো লাক্সারি গাড়িতে চড়ে যান মানুষকে আল্লাহর পথে আহবান করতে। তাদের অবস্থা কি? তারা কি জামাল না?
উট: যারা দুনিয়ায় জীবনে কোনো সুবিধা নেয়ার জন্য মানুষকে আল্লাহর পথে আহবান করে, তারা কখনো আল্লাহর প্রকৃত হেদায়াত প্রাপ্ত হয় না। এবার তুমি বুঝে নাও।
শ্যাই: তাহলে, এই জামাল থেকে আমাদের কি শিক্ষা?
উট: (২) আল্লাহর হেদায়াত প্রাপ্ত ব্যক্তি নিঃস্বার্থ ভাবে মানুষকে আল্লাহর পথে আহবান করে, তার কাছ থেকে তোমরা শিখবে, তোমরা সঠিক পথের দিশা পাবে। আর যে ব্যক্তি দুনিয়াতে সুবিধা ভোগ করে মানুষকে আল্লাহর পথে আহবান করে, তার থেকে সঠিক পথের কোনো দিশা নাই।
শ্যাই: নাকত শব্দটি কি অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে?
উট: নাকত শব্দের অর্থ গর্ভবতী উট। যেহেতু ওই ঘটনায় নাকাতের পানি (ঐশ্বরিক অনুপ্রেরণা -Divine Inspiration) পান করার উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তাই এখানে নাকত বলতে বুঝানো হয়েছে যার গর্ভে আল্লাহর বাণী আছে। নাকত মানে যা আল্লাহর বাণী বহন করে। তোমরা আল-কোরআন কে ভাবতে পারো নাকাতের সমতুল্য। “নাকত” শব্দের আক্ষরিক অর্থ ‘পয়েন্ট বা সাইন বা সংকেত বা ইঙ্গিত’। নাকতকে সামুদ জাতির জন্য “আল্লাহর বাণী” হিসাবে ইঙ্গিত দেয়া হয়েছিল এবং তার ক্ষতি সাধন বা ধ্বংস করতে নিষেধ করা হয়েছি। সামুদ জাতি নাকাত (আল্লাহর বাণী) কে ধ্বংস করেছিল, যার পরিপ্রেক্ষিতে তারা নিজেরাই ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল।
“নাকাত ” শব্দটা যেহেতু ফেমিনিন (feminine) হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে, তাই তার উপর তোমাদেরকে অ্যাক্ট বা আমল করতে হবে, তাহলে সেটা তার পূর্ণতা লাভ করে। আল্লাহর বাণীর ফল বা ফজিলত আসে যখন মানুষ সেটা পাঠ করে, অর্থাৎ মানুষ যখন আল্লাহর বাণীর উপর অ্যাক্ট করে বা আমল করে, তখন সে তার ফজিলত বা সুবিধা পায়। “নাকাত ” শব্দটা ৭ বার আল-কোরআনে উল্লেখ করার মধ্যে দিয়ে এর গুরুত্ব অনেক বৃদ্ধি করা হয়েছে।
শ্যাই: নাকত থেকে আমাদের জন্য কি শিক্ষা আছে?
উট: এই নাকত থেকে তোমাদের জন্য শিক্ষা হচ্ছে, (৩) তোমরা আল্লাহর বাণী পাঠ করবে, তোমরা কখনো আল্লাহর বাণীর কোনো ক্ষতি বা ধ্বংস করবে না, তাহলে তোমরাই ক্ষতি সাধনের শিকার হবে বা ধ্বংস হয়ে যাবে।
শ্যাই: “..এবং যখন পূর্ণ মেয়াদী গর্ভবতী উট (ইশারু) অবহেলিত হবে [৮১:৪]” – এখানে ইশারু বলতে কি বোঝানো হয়েছে?
উট: এখানে কেয়ামতের সময়ের একটা আলামত হিসাব বলা হয়েছে, যখন “আল্লাহর পূর্ণাঙ্গ বাণী” অবহেলিত থাকবে। অর্থাৎ যখন আল-কোরআন অবহেলিত থাকবে।
শ্যাই: তোমার সাথে কথা বলে অনেক কিছু শিখলাম। ধন্যবাদ। আজ তাহলে যাই।
উট: ঠিক আছে, তবে যখন কোনো উট দেখবে বা উটের কথা শুনবে তখন এই দোয়াটি পড়বে। “রাব্বানা লা তুজিঘ কুলুবানা বাআদা ইজ হাদাইতানা ওয়াহাব লানা মিন লাডুনকা রহমতান ইন্নাকা আন্তা আলওহহাব। – হে আমাদের প্রভু! আপনি আমাদেরকে হেদায়েত করার পর আমাদের হৃদয়কে বিচ্যুত হতে দেবেন না। আমাদের আপনার রহমত দান করুন। আপনি নিশ্চয়ই সকল দানকারী [৩:৮].”
শ্যাই: চেষ্টা করবো।
উট: আমার শিক্ষা ভালো লাগলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করো।
শ্যাই: ফেইসবুক পোস্ট দিয়ে দিবো।
শ্যালো ইনসান উটের কথা ভাবছে। চোখ অশ্রুসজল। আর ভাবতে পারছে না। কিছুদূর যেতেই সে একটা গাধা দেখতে পায় ………. চলবে………