ফ্ল্যাশব্যাক – (শ্যালো ইনসান গাধার কথা ভাবছে। ——কুকুরের ডাকে চমকে উঠে )
শ্যালো ইনসান দেখলো একটা কুকুর তাকে কাছে ডাকছে।
কুকুর: কি, আমার ডাকে ভয় পেলে নাকি?
শ্যাই: না, না (একটু বিব্রত হয়ে)। বলো কি জন্যে ডেকেছো?
কুকুর: দেখলাম তুমি গাধার সাথে কথা বলছো, তাই ভাবলাম তোমাকে জিজ্ঞাসা করি কি কথা হলো?
শ্যাই: গাধাকে আমি একটা গল্প বললাম, পরে সেও আমাকে কিছু বললো ও শিক্ষা দিলো।
কুকুর: আচ্ছা, তাই নাকি? তো আমাকেও একটা গল্প শোনাও।
শ্যাই: নাহ। বরং তোমার কাছ থেকে শুনবো। পবিত্র কোরআনে সূরা আল কাহফ অর্থাৎ সূরা গুহাতে তোমার উদাহরণ আছে। আমি জানতে চাই সেখানে তোমার উদাহরণ দিয়ে কি বুঝানো হয়েছে?
কুকুর: ঠিক আছে বলবো। তার আগে তুমি বলো কোরআনে কতবার আমাকে উল্লেখ করা হয়েছে?
শ্যাই: পবিত্র কোরআনে মোট ৩ আয়াতে ৫ বার তোমার নাম উল্লেখ করা আছে – কাল্ব [৭:১৭৬, ১৮:১৮, ১৮:২২] ।
কুকুর: আল-কোরআনে কুকুরের ২ টি বৈশিষ্ট্য দিয়ে তোমাদের জন্য ২টি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা দেয়া হয়েছে।
শ্যাই: আচ্ছা। সে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা দুটি কি?
কুকুর: বলছি। তার আগে কুকুরের ২ টি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করি।
কুকুর যে পালে তাকে অথবা তার কিছুকে রক্ষা করে ও পাহারা দেয়, তাই সাধারণ অর্থে কুকুরকে রক্ষক বা ডিফেন্ডার হিসাবে বুঝানো হয়। সুতরাং কুকুরের প্রথম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সে রক্ষক বা রক্ষাকর্তা (Protector, Defender, Savior)। আর কুকুরের দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য হলো কুকুরে জিহ্বা ঝুলিয়ে রাখা। যেহেতু কুকুর শরীর দিয়ে ঘাম ঝরাতে পারে না তাই সে জিহ্বা ঝুলিয়ে লালা বের করে শরীরকে ঠান্ডা করে। অর্থাৎ কুকুর জিহ্বা ঝুলিয়ে রাখে বেঁচে থাকার জন্য। এটা তার সারভাইভাল বা বেঁচে থাকার জন্য আবশ্যক।
শ্যাই: কুকুরের জিহ্বা ঝুলিয়ে রাখাকে মানুষের জন্য “লোভ” হিসেবে বুঝানো হয়েছে না?
কুকুর: না। কুকুর জিহ্বা ঝুলাই না লোভ দেখানোর জন্য। আমরা সেটা করি বেঁচে থাকার জন্য। তোমরা মানুষরা লোভী, আমরা লোভী না।
শ্যাই: দুঃখিত। আমি আসলে তোমার মনে আঘাত লাগবে সে জন্য বলি নাই। সাধারণত, মানুষ মনে করে…
কুকুর: থামো, তোমরা অনেক কিছুই মনে করো, যে গুলোর কোনো ভিত্তি নেই। শুধু আন্দাজ ও অনুমান করে কথা বলো। আর নিজেদেরকে বড় করার জন্য অন্যকে ছোট করো।
শ্যাই: আমি আবারো দুঃখিত। এখন বলো, এই আয়াত থেকে আমরা কি বুঝবো?
“তোমরা তাদেরকে দেখে মনে করতে তারা জেগে আছে, অথচ তারা ঘুমুচ্ছিল। আমি তাদের ডাইনে বাঁয়ে পার্শ্ব পরিবর্তন করাচ্ছিলাম। এবং তাদের কুকুর গুহা মুখে সামনের দু’পা ছড়িয়ে বসেছিল। যদি তুমি কখনো উঁকি দিয়ে তাদেরকে দেখতে তাহলে পিছন ফিরে পালাতে থাকতে এবং তাদের দৃশ্য তোমাকে আতংকিত করতো [১৮:১৮]।”
কুকুর: আগে বলো, তুমি কি বুঝলে এই বর্ণনা থেকে?
শ্যাই: আমিতো বুঝলাম এটা একটা ঐতিহাসিক ঘটনার অংশ। এখন থেকে শিক্ষার আবার কি আছে?
কুকুর: হু। তোমার নাম কি ?
শ্যাই: শ্যালো ইনসান।
কুকুর: নাম শুনেই বুঝা যায় তোমার জ্ঞানের গভীরতা। তোমরা আসলেই কোনো বিষয় গভীরভাবে চিন্তা করো না। যাইহোক, শুনো, পবিত্র কোরআনে প্রতিটা ঐতিহাসিক ঘটনার মধ্যে অনেক শিক্ষা আছে, যদি তোমরা বুঝতা।
শ্যাই: তাই যদি হয়। তাহলে বলো, এই ঘটনা থেকে আমাদের কি বুঝার ও শেখার আছে ?
কুকুর:
তোমরা যখন মুক্ত মনে আল্লাহরতালার কাছে হেদায়েত লাভের আশায় কুরআনের আয়াত পাঠ করো, আল্লাহতালা তোমাদের মনের জগতে বা মানুষিক কাঠামোতে (Mental Schema) সত্য-সঠিক বোধ বা জ্ঞান বা বৈশিষ্ট্য (attribute) বপন করে দেন। এই সকল জ্ঞান ও বোধশক্তি তোমাদেরকে কোরআন বুঝার, নামাজ পড়ার, রোজা রাখা, জাকাত ও দান-সাদকা, অথবা যেকোনো ভালো কাজের উৎসাহ দেয়। আবার এভাবে চিন্তা করো, তোমাদের মানুষিক কাঠামোর বৈশিষ্ট্যগুলো (Attributes of Mental Schema) যেটা আল্লাহতালা তোমাদের দান করেন, সেগুলো তোমাদের বিভিন্ন ভালো কাজ করার জন্য অনুপ্রেরণা ও উৎসাহ দেয়। তোমাদের অঙ্গীকার বা প্রতিজ্ঞা হবে সেই জ্ঞান বা উপলব্ধিগুলোকে রক্ষা ও সংরক্ষণ করা। কখনো নষ্ট বা ধ্বংস হতে দেবেনা। শয়তান ও তার সাথীরা চেষ্টা করবে তাদের অনুপ্রেরণা (ওয়াসওয়াসা) দিয়ে তোমাদের ভিতরের এই বোধ বা উপলব্ধিকে ধ্বংস করে দিয়ে তোমাদেরকে দুনিয়ায় ধনসম্পত্তি অর্জনের মাধ্যমে সুখ, আনন্দ, সম্মান, সফলতা ইত্যাদি দিয়ে আকর্ষণ করতে।
এই আয়াতে ওই ব্যক্তিরা হচ্ছে তোমাদের দেয়া আল্লাহর জ্ঞান বা উপলব্ধিগুলোর সমতুল্য। কুকুর যেভাবে সেই মানুষগুলোকে রক্ষা করছিলো তেমনি ভাবে তোমাদের মালিকের দেয়া উপলন্ধি বা জ্ঞানগুলোকে তোমরা রক্ষা করবে। সুতরাং এই আয়াতে কুকুরের উদাহরণ দিয়ে বুঝানো হচ্ছে যে আল্লাহর দেয়া হেদায়েত বা উপলন্ধি বা জ্ঞানগুলোকে রক্ষা ও সংরক্ষণ করবে।
শ্যাই: তুমি কি করে বুঝলে যে ওই মানুষগুলো দিয়ে “আল্লাহর হেদায়েত বা বোধ বা জ্ঞান” বুঝানো হয়েছে?
কুকুর: ওই মানুষগুলো দিয়ে “আল্লাহর হেদায়েত বা বোধ” বুঝায় সেটা এই আয়াতে [১৮:২২] ইঙ্গিত আছে।
শ্যাই: সেটা কি রকম?
কুকুর: এই আয়াতে [১৮:২২]
“কিছু লোক বলবে, তারা ছিল তিনজন আর চতুর্থজন ছিল তাদের কুকুরটি। আবার অন্য কিছু লোক বলবে, তারা পাঁচজন ছিল এবং তাদের কুকুরটি ছিল ষষ্ঠ, এরা সব আন্দাজে কথা বলে। অন্যকিছু লোক বলে, তারা ছিল সাতজন এবং অষ্টমটি তাদের কুকুর। বলো, আমার রবই ভাল জানেন তারা ক’জন ছিল, অল্প লোকই তাদের সঠিক সংখ্যা জানে। কাজেই তুমি সাধারণ কথা ছাড়া তাদের সংখ্যা নিয়ে লোকদের সাথে বিতর্ক করো না এবং তাদের সম্পর্কে কাউকে কিছু জিজ্ঞাসাবাদও করো না।”
এই আয়াতে মানুষের সংখ্যা ৩ ও ৫ কে ত্রুটিপূর্ণ বলা হয়েছে। ৭ কে ত্রুটিপূর্ণ বলা হয় নাই। সুতরাং আমার ৭ কে মানুষের সংখ্যা হিসাবে নিতে পারি। কোরআন শরীফে উল্লেখ করা হয়েছে ৩ ধরণের মানুষ (নাফ্স)। তিন কে প্রতীকী হিসাবে বুঝানো হয়েছে মানুষের ধরন হিসাবে এবং সাথে কুকুর – এটা কোনো প্যাটার্ন বা উদাহরণের সাথে মিলে না। ৫ হচ্ছে ইসলামের ভিত্তি (কালেমা, নামাজ, রোজা, যাকাত এবং হজ্জ্ব) এবং এদের সমতুল্য প্রকৃতির উপাদান (Elements of Nature – Ether/Space, Water, Air, Earth, Fire) – ইথার/আকাশ, পানি, বাতাস, মাটি ও আগুন। এখানেও ৫ এর সাথে কুকুর – এটাও কোনো প্যাটার্ন বা উদাহরণের সাথে কোনো সম্পর্ক হয় না।
শ্যাই: তুমি বলছো প্রকৃতির উপাদান – ইথার/আকাশ, পানি, বাতাস, মাটি ও আগুন এর সাথে আমাদের কালেমা, নামাজ, রোজা, যাকাত এবং হজ্জ্ব এর মিল আছে ?
কুকুর: হ্যা, তাই। তোমাদের দেহে এই ৫ টি উপাদান আছে এবং তোমাদেরকে এর ভারসাম্য (balance) রাখতে হবে যাতে তোমাদের সাথে আল্লাহর গভীর সম্পর্ক হয় এবং প্রকৃতির মাঝে ভারসাম্য হয়ে থাকো।
শ্যাই: আচ্ছা! প্রকৃতির এই ৫ টি উপাদানে ভারসাম্য আনলে আল্লাহর সাথে কিভাবে সম্পর্ক হয়? আর এর সাথে কালেমা, নামাজ, রোজা, যাকাত এবং হজ্জ্ব এর সম্পর্ক কি?
কুকুর: আমি এটা তোমাকে ভালো ভাবে বুঝাতে পারবো না। তবে একজনের নাম জানি উনি ভালো বোঝেন।
শ্যাই: তার নাম নুরুল হুদা। এর পরে কি বলবা সেটাও জানি। তাহলে ৭ সংখ্যা দিয়ে কি বুঝানো হয়েছে?
কুকুর: ৭ দিয়ে বুঝানো হয়েছে ৭ ধরনের বোধশক্তি বা জ্ঞান। কোরআনে ৭ আসমান বা বেহেস্ত শব্দ দিয়ে ৭ ধরনের উপলব্ধি বুঝানো হয়। আর অষ্টম হচ্ছে “আরদ” বা “পৃথিবী” যা দিয়ে বুঝানো হয়েছে স্ক্রিপচার টেক্সট বা আল-কোরআন। আয়াত মানে চিহ্ন, সাইন, বার্তা। কোরআনের আয়াত পাঠ করলে ৭ ধরণের উপলব্ধি বা অর্থ আসবে। আল্লাহতালা যাকে যেভাবে চান অথবা যে যেভাবে বুঝতে চায় তাকে সে ভাবে অর্থ দেন। প্রকৃত অর্থে কোরআনের কোনো নির্দিষ্ট তাফসীর হয়না, সে কারণে নবী মুহাম্মদ (সা:) ও তার নিকটতম কোনো সাহাবীর কোনো তাফসীর নেই। তাফসীর যিনি করেন, এটা হয় সেই ব্যক্তির উপলব্ধি। তার মানে সেই ব্যক্তির তাফসীর ভুল সেটা না, এর অর্থ হলো এই তাফসীর এক ধরনের অর্থ বা উপলব্ধি মাত্র, এবং এখানে আরো অনেক ধরনের অর্থ ও জ্ঞান আছে। এগুলোর উপরের স্তরের অর্থ একমাত্র আল্লাহ ভালো জানেন। যখন কোনো মানুষ মুক্ত মনে আল্লাহরতালার কাছে হেদায়েত লাভের আশায় আল-কোরআন পাঠ করে, আল্লাহরতালা তার মানুষিক কাঠামোতে উপলব্ধির বীজ বপন করে দেন।
শ্যাই: তাহলে তুমি বলতে চাইছো সেই গুহার ব্যক্তি দিয়ে আল্লাহতালার হেদায়েত বা আয়াতের জ্ঞান যেটা মানুষের সত্য ও সঠিক উপলব্ধি সেটা বুঝানো হয়েছে।
কুকুর: হ্যা। তাই। ৭ সংখ্যা দিয়ে যেহতু ৭ ধরনের বোধশক্তি বা জ্ঞান বুঝানো হয়, তাই এই আয়াতে মানুষের সংখ্যা ৭ দিয়ে আল্লাহর হেদায়েত বা জ্ঞান ইঙ্গিত করা হয়েছে। কুকুর দিয়ে সেই জ্ঞানগুলো সংরক্ষিত আছে সেটা বুঝানো হয়েছে। তাছাড়া এই উপলব্ধির একটা শক্ত লিংক হচ্ছে এই আয়াত [৭:১৭৫-৭৬] দুটিতে।
শ্যাই: সেটা কেমন?
কুকুর: এই আয়াতে লক্ষ্য করো –
“আর হে মুহাম্মাদ! এদের সামনে সেই ব্যক্তির অবস্থা বর্ণনা করো, যাকে আমি দান করেছিলাম আমার আয়াতের জ্ঞান। কিন্তু সে তা যথাযথভাবে মেনে চলা থেকে দূরে সরে যায়। অবশেষে শয়তান তার পিছনে লাগে। শেষ পর্যন্ত সে বিপথগামীদের অন্তর্ভুক্ত হয়েই যায় [৭:১৭৫]। আমি চাইলে ঐ আয়াতগুলোর সাহায্যে তাকে উচ্চ মর্যাদা দান করতাম কিন্তু সে তো দুনিয়ার প্রতিই ঝুঁকে রইল এবং নিজের প্রবৃত্তির অনুসরণ করলো। কাজেই তার অবস্থা হয়ে গেল কুকুরের মত, তার ওপর আক্রমণ করলেও সে জিভ ঝুলিয়ে রাখে আর আক্রমণ না করলেও জিভ ঝুলিয়ে রাখে। যারা আমার আয়াতকে মিথ্যা সাব্যস্ত করে তাদের দৃষ্টান্ত এটাই। তুমি এ কাহিনী তাদেরকে শুনাতে থাকো, হয়তো তারা কিছু চিন্তা-ভাবনা করবে [৭:১৭৬]। – তাফহীমুল কুরআন”।
প্রথম আয়াতে, সেই ব্যক্তিকে আল্লাহ তার আয়াতের জ্ঞান দান করেছিলেন, এবং তাকে সেটা রক্ষা ও সংরক্ষণ করতে বলা হয়েছিল। আল্লাহ তাকে রক্ষকের ভূমিকায় থাকতে বলেছেন, অর্থাৎ কুকুরের প্রথম বৈশিষ্ট্যের মতন। সুতরাং আয়াত (১৮:১৮ এবং ১৮:২২) কুকুরের উদাহরণ থেকে তোমাদের জন্য শিক্ষা হচ্ছে –
(১) তোমরা আল্লাহর অর্থাৎ মালিকের দেয়া জ্ঞান বা উপলব্ধি রক্ষা ও সংরক্ষণ করার ব্যাপারে এমন অঙ্গীকারবদ্ধ বা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হবে যেন তোমাদের দেখে শয়তান ও তার সাথীরা দূরে সরে যায়। যেহেতু এখানে কোরআন পাঠের মাধ্যমে অর্জিত জ্ঞানকে বুঝানো হয়েছে, তাই বেশি করে আল-কোরআন পাঠের মাধ্যমে জ্ঞান আরো বৃদ্ধি ও শক্তিশালী করে সেটা রক্ষা করতে হবে, যাতে শয়তান কোনো ক্ষতি করতে না পারে।
শ্যাই: ঠিক আছে। তাহলে দ্বিতীয় আয়াতে [৭:১৭৬] তো কুকুরের উদাহরণ খারাপ ভাবে বুঝানো হয়েছে ? সেটা কি ঠিক না?
কুকুর: হ্যা। [৭:১৭৬] আয়াতে কুকুরের দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্যের কথা বলা হয়েছে এবং এটা তোমাদের জন্য বর্জন হিসাবে। তোমাদের সেটা করতে নিষেধ করা হয়েছে।
শ্যাই: সেটা কেমন?
কুকুর: কুকুরের দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য হলো, কুকুর জিহ্বা ঝুলিয়ে রাখে বেঁচে থাকার জন্য। কুকুরের জিহ্বা ঝুলিয়ে রাখাকে মানুষের জন্য দুনিয়ার প্রতি তার আকর্ষণকে এভাবে বোঝানো হয়েছে যে সেটা না হলে সে বাঁচবে না।
এখানে সেই ব্যক্তির উদাহরণ এমন যে, সে দুনিয়ায় ধনসম্পত্তি, সুখ, আনন্দ, সম্মান ইত্যাদি প্রতি এমন ভাবে ঝুকে আছে যে সেগুলো না হলে সে বাঁচবে না অথবা সেগুলো ছাড়া তার জীবন অর্থহীন, বেঁচে থাকার কোনো মানে হয় না। এই উদাহরণটা “আক্রমণ না করলেও জিভ ঝুলিয়ে রাখে” এই অর্থে। আর “তার ওপর আক্রমণ করলেও সে জিভ ঝুলিয়ে রাখে ”এটার মানে হচ্ছে যে, এরকম ব্যক্তি যে দুনিয়ার (ধনসম্পত্তি, সুখ, আনন্দ, সম্মান) প্রতি ঝুকে থাকে এবং তার যদি কোনো বড় ক্ষতি হয় তখন তার উপলব্ধি এমন হয় যে, এখন সে কিভাবে বাঁচবে তার তো সব শেষ হয়ে গেছে। সে ভাবছে, আমি ধ্বংস হয়ে গেছি আমার এখন কি হবে। যখন তার আল্লাহর কথা স্মরণ হওয়ার কথা, তখন তার মনে হচ্ছে সে এখন কিভাবে এই দুনিয়ায় বেঁচে থাকবো। এটা তোমাদের জন্য খুবই খারাপ উদাহরণ।
শ্যাই: আমাকে কি আরেকটু বুঝায় বলবা? আমরা কি তাহলে দুনিয়ায় টাকা পয়সা সম্পত্তি করবো না?
কুকুর: তোমাকে একটু ব্যাখ্যা করে বুঝাই। কুকুরের বৈশিষ্ট্য দুটিকে একটা নীতি (principle) হিসাবে প্রকাশ করা যায়। আর সেটা হলো “Principle of Attachment and Detachment” প্রিন্সিপল অফ এটাচমেন্ট এন্ড ডিটাচ্মেন্ট অথবা সংযুক্তি এবং বিচ্ছিন্নতার নীতি। কুকুরের উদাহরণ দেওয়া হয়েছে দুটি সত্তার মধ্যে সম্পর্কের ধরন স্বরূপ। এখানে আল্লাহর সাথে সম্পর্ক হবে এটাচমেন্ট বা সংযুক্তি আর সেটা হতে হবে আল্লাহর দেয়া জ্ঞান রক্ষার (কুকুরের প্রথম বৈশিষ্ট্য) মাধ্যমে। আর দুনিয়ার সাথে সম্পর্ক হবে ডিটাচমেন্ট বা বিচ্ছিন্নতার আর সেটা হতে হবে দুনিয়ার প্রতি (কুকুরের দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য) ঝুকে না পরার মাধ্যমে। কুকুর একই সাথে দুটি বিষয় চিত্রিত করে – সংযুক্তি (Attachment) এবং বিচ্ছিন্নতা (Detachment)। আমি এই প্রিন্সিপলটা আরেকটু ভালো করে ব্যাখ্যা করি তারপর তোমার প্রশ্নোর উত্তর দিবো।
শ্যাই: ঠিক আছে।
কুকুর: Principle of Attachment and Detachment (সংযুক্তি এবং বিচ্ছিন্নতার নীতি) হচ্চে একটা সমীকরণের মতো। এটাচমেন্ট হচ্ছে ডিটাচমেন্ট এর সমানুপাতিক। অর্থাৎ
A (attachment with Allah) ∝ D (detachment with worldly stuff)
or A = kD where k is a non-zero constant.
আল্লাহর সাথে সম্পর্কের গভীরতা সরাসরি সমানুপাতিক দুনিয়ার (পার্থিব জিনিসের) সম্পর্কের সাথে। দুনিয়ার সাথে সম্পর্ক কমালে (অর্থাৎ ডিটাচমেন্ট বাড়লে) আল্লাহর সাথে সম্পর্কে বাড়বে আর দুনিয়ার সাথে সম্পর্ক বাড়ালে (অর্থাৎ দুনিয়ার ডিটাচমেন্ট কমে এটাচমেন্ট বাড়লে) আল্লাহর সাথে সম্পর্ক কমবে।
শ্যাই: বাহ্, এটাতো দেখছি সমীকরণের মতো সত্য।
কুকুর: হ্যা। এটা সমীকরণের মতো সত্য।
শ্যাই: এখানে এটাচমেন্ট বুঝা যায়। অর্থাৎ কোরআন পড়া, নামাজ পড়া, রোজা রাখা ইত্যাদি। কিন্তু ডিটাচমেন্ট, দুনিয়ার সাথে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন বলতে কি বোঝায় ? একটু ব্যাখ্যা করে বলবা?
কুকুর: বলছি। তোমাদেরকে হালাল উপায়ে অর্থ উপার্জন ও ধনসম্পত্তি করার ব্যাপারে নিষেধ করা হয় নাই। কোরআনে সেই ব্যক্তির উদাহরণ এমন ছিলো যে, সে দুনিয়ায় ধনসম্পত্তি, সুখ, আনন্দ, সম্মান ইত্যাদি প্রতি এমন ভাবে ঝুকে আছে যে সেগুলো না হলে সে বাঁচবে না অথবা সেগুলো ছাড়া তার জীবন অর্থহীন, বেঁচে থাকার কোনো মানে হয় না। অর্থাৎ যারা মনে করে আমার এই ধনসম্পত্তি না হলে চলবে না। এই পরিমান অর্থ উপার্জন না করিলে, আমার হবে না। এই পার্থিব জিনিষটা না পেলে সুখ আসবেনা। এরকম আনন্দ না করতে না পারলে সবই বৃথা। এই সম্মানটা না পেলে আমার কোনো দাম থাকেনা, ইত্যাদি ইত্যাদি। সুতরাং, অর্থ বা ধনসম্পত্তি উপার্জন থেকে বিচ্ছিন্ন থাকতে বলা হয়নি। বরং এমন বিশ্বাস বা চিন্তা যে এই পরিমান অর্থ বা ধনসম্পত্তি বা ক্ষমতা বা সম্নান না হলে চলবে না সেটা বুঝানো হয়েছে। এমন বিশ্বাস বা চিন্তা যেটা পার্থিব কোনো জিনিস, যেটা না হলে জীবন চলবেনা এই অর্থে।
শ্যাই: পার্থিব বিষয়ে কার কি ধরনের বিশ্বাস বা চিন্তা আছে, সেটাতো বুঝা অনেক মুশকিল? এটাতো এক ধরনের গ্রে এরিয়া (Grey Area) বা অস্পষ্ট বিষয়।
কুকুর: হ্যা। যখন এ ধরনের অস্পষ্ট বিষয়ে থাকে, তোমরা দিকনির্দেশক (directional) পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারো।
শ্যাই: সেটা কেমন?
কুকুর: যেমন ধরো মদের ব্যাপারে তোমাদের নির্দেশ। অল্প একটু মদ খেলে শারীরিক বা মানসিক কোনো সমস্যা হয় না। তারপরও এটা নিষেধ করা হয়েছে। কারণ এটা অভ্যাসে পরিণত হয় অথবা পরিমান বাড়লে সেটা মানসিক ও শারীরিক ক্ষতি করে। আরেকভাবে দেখো, উন্নত বিশ্বে রাস্তায় লেখা থাকে “মদ পান করার পর গাড়ি চালাবেন না”। এটা আইনগত অপরাধ। এটাকে আমি বলছি দিকনির্দেশক Directional নিষেধ, অর্থাৎ এমন ধরণের কাজ বা অভ্যাস যেটা খুব সামন্য করলে হয়তো ক্ষতি হয় না কিন্তু সেটার পরিমান বাড়লে অনেক বড় বা বেশি ক্ষতি হয়।
শ্যাই: তুমি কি পার্থিব জীবনের “ডিটাচমেন” কে উদাহরণসহ ব্যাখ্যা করে বুঝাবে? সেখান থেকে আমাদের কি শিক্ষা আছে?
কুকুর: ঠিক আছে। শিক্ষা হলো, তোমাদেরকে পার্থিব জিনিস থেকে বিচ্ছিন্নতার অভ্যাস (Practice of Detachment) তৈরী করতে হবে। বিচ্ছিন্নতার অভ্যাস দুই ধরনের – সাধারণ (general, common) এবং দিকনির্দেশক (directional)
(২) সাধারণ বিচ্ছিন্নতা
অর্থ-সম্পদ দান করা – তোমরা নিয়মিতভাবে অর্থ-সম্পদ দান করবা। সেটা যাকাত বা সাদকা হিসেবে হতে পারে বা অন্য যে কোনো উদ্দেশে হতে পারে। অর্থ-সম্পদ দান করার মধ্যে দিয়ে তোমাদের অন্তরটা পরিষ্কার ও পবিত্র হয়। আর এভাবে অর্থ-সম্পদ ডিটাচ করে তোমরা আল্লাহর সাথে এটাচমেন্ট বাড়াতে পারো।
(৩) দিকনির্দেশক (directional) বিচ্ছিন্নতা
(৩.১)পরিচয় সংকট: তোমাদের দেশের মানুষের একটা অনন্য (ইউনিক, যেটা অন্য দেশে বিরল) বৈশিষ্ট হলো তোমরা পরিচয় সংকটে ভুগো ও এটা ব্যাপকহারে সমাজের সর্বস্তরে ছড়িয়ে আছে। পরিচয় সংকট বলতে বুঝায় তোমরা নিজের পরিচয়ে সন্তুষ্ট নও, অথবা সন্মান বা মর্যাদা আছে বলে মনে করোনা। তোমরা আরেকজনকে নিজের সাথে সংযুক্ত করে নিজের মর্যদা ও সন্মান বৃদ্ধি করতে চাও। তোমরা অন্য মানুষের সামনে অপ্রয়োজনে নিজের বংশো বা জাত পরিচয় দিয়ে বুঝাতে চাও যে তোমরাও উচ্চ-মর্যাদা সম্পন্ন সম্মানী ব্যক্তি। আবার কখনো নিকট বা দূর পরিবারের কেহ উচ্চ-ক্ষমতা বা উচ্চ-পেশাগত যোগ্যতা বা উচ্চ-ধনী সম্পন্ন ইত্যাদি থাকলে, তার পরিচয় দিয়ে বুঝাতে চাও যে আমিও একই ধরণের যোগ্যতা সম্পন্ন, আমিও ক্ষমতা বা সন্মান পাওয়ার যোগ্য। আবার জ্ঞান-দর্শন ইত্যাদির ক্ষেত্রেও তোমরা একজন জ্ঞানী বা জনপ্রিয় ব্যক্তির লেখা হালকা ভাবে পড়ে, অন্যদের সাথে গল্প করো এমনভাবে যে সেই ব্যক্তি যেমন জ্ঞানী তেমনি আমিও একজন বোদ্ধা ও জ্ঞানী। এই অভ্যাস তোমাদের সব জায়গাতে, এমনকি ধর্ম ও রাজনীতির ভিতরেও। আরেকজনকে নিজের সাথে সংযুক্ত করে দুনিয়াতে নিজের মর্যদা ও সন্মান বৃদ্ধি করতে চাও। এটা এমন ধরনের কাজ যেটা আরেকজনের সাথে নিজের সংযুক্তি না দিলে নিজের মান-সন্মান থাকেনা, নিজের পরিচয় অর্থহীন হয়ে পরে বুঝায়। এ সব কাজ সরাসরি আল্লাহর সাথে তোমাদের সম্পর্ক কমিয়ে দিবে। সুতরাং আল্লাহর সাথে সম্পর্ক বৃদ্ধি করতে চাইলে এ ধরণের কাজ অর্থাৎ আরেকজনের সাথে যুক্ত করে নিজের পরিচয় দেয়া বিচ্ছিন্ন করতে হবে। আল্লাহ তাকে পছন্দ করেন না যে আল্লাহর দেয়া অবস্থা ও পরিচয়ে সন্তুষ্ট থাকতে পারে না, যার নিজের আত্মমর্যাদা বোধ নেই।
(৩.২) বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বা সমিতির সদস্যপদ: তোমরা যদি কোনো প্রতিষ্ঠান বা সমিতি প্রতিষ্ঠা করো বা সদস্যপদ নাও ভালো কাজ করার উদ্দেশে অথবা শিক্ষাগত বা পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য তাহলে সেটা ঠিক আছে। কিন্তু তোমাদের দেশে অনেক মানুষ সমিতি প্রতিষ্ঠা করে বা সদস্যপদ নেই শুধু নিজের পরিচয় দেয়ার জন্য বা পরিচয় বৃদ্ধি করার জন্য। তারা মনে করে এ ধরনের পরিচয় পার্থিব জীবনে তার ক্ষমতা, মর্যদা ও সন্মান বৃদ্ধি করে। এ ধরনের কাজ যেটা কোনো প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত করে দুনিয়ায় নিজের ক্ষমতা ও সন্মান বৃদ্ধি করার উদ্দেশে হয়, সে ধরনের কাজ করা থেকে অবশ্যই দূরে থাকতে হবে আল্লাহর সাথে সম্পর্ক বৃদ্ধি করতে চাইলে। আল্লাহতালা তার সন্মান ও মর্যাদা বৃদ্ধি করেন না যে আল্লাহর দিকে না তাকিয়ে মানুষের দিকে তাকায় তার সন্মান বৃদ্ধির জন্য।
(৩.৩) নামের আগে বিশেষ ধরনের স্বত্ব বা খেতাব বা টাইটেল যুক্ত করা : যেমন তোমাদের অনেকে আছে যে নামের আগে তার লেখাপড়ার বা পেশাগত বা কোনো কর্মের যোগ্যতা সংযুক্ত করে দেয়। যেমন ইঞ্জিনিয়ার শ্যালো ইনসান বা ডাক্তার শ্যালো ইনসান বা ড. শ্যালো ইনসান বা অধ্যাপক শ্যালো ইনসান বা হাজি শ্যালো ইনসান ইত্যাদি। নামের আগে এ ধরনের টাইটেল সংযুক্ত করে সেই ব্যক্তি বোঝাতে চায় যে সে উচ্চ-যোগ্যতা সম্পন্ন, বিশেষ ব্যক্তি, সম্মানী। অথচ একজনের কর্ম ও ব্যবহার প্রকাশ করে তার যোগ্যতা ও সন্মান। এ ধরনের অভ্যাস বা কাজ প্রমান করে সে দুনিয়ার মানুষকে দেখাতে চায়, অর্থাৎ দুনিয়ার প্রতি তার গভীর আকর্ষণ। এটা দিকনির্দেশক দুনিয়ার প্রতি আকর্ষণ। সুতরাং এ ধরনের কাজ বা অভ্যাস থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করতে হবে। তবে হ্যা, কারো পেশাগত পরিবেশে বা উদ্দেশে লাগলে সেটা করা যাবে। এটা সাধারণ পরিবেশে বা মানুষ দেখানোর উদ্দেশে হলে, পরিত্যাগ করতে হবে আল্লাহর সাথে সম্পর্ক বৃদ্ধি করতে চাইলে। আল্লাহ তাকে পছন্দ করেন না, যে আল্লাহর দেয়া যোগ্যতা নিজের যোগ্যতা বলে প্রচার করে সবার কাছ থেকে বাহবা পেতে চায়।
(৩.৪) পোশাক-পরিচ্ছেদ ও জিনিসপত্র: দামি, বিলাসবহুল ব্রান্ডের পোশাক যেটার উদ্দেশ্যে হয় মানুষকে দেখানো ও বোঝানো যে আমি একজন উচ্চ-মর্যাদা সম্পন্ন ব্যক্তি অথবা আমার অনেক অর্থকড়ি আছে। এ ধরনের কাজ পার্থিব জীবনের প্রতি তোমাদের যে আকর্ষণ, ভালোবাসা ও গুরুত্ব, সেটার দিকনির্দেশনা দেয়। এ ধরণের কাজ বা অভ্যাস অবশ্যই পরিত্যাগ করতে হবে আল্লাহর সাথে সম্পর্ক বৃদ্ধি করতে চাইলে। তবে কেউ যদি উপরের উল্লেখিত উদ্দেশ্য ছাড়া শুধু পোশাকের মানের কথা চিন্তা করে দামি ব্রান্ডের পোশাক পরিধান করে তবে অন্য কথা। উপরের উল্লেখিত উদ্দেশ্য ছাড়া কেউ যদি তার আয় বুঝে ব্যয় করে, তবে ভিন্ন কথা। এটা যেহেতু একটু অস্পষ্ট বিষয়, এখানে ব্যক্তির সঠিক পথের অর্থ-উপার্জন একটা মাপকাঠি হতে পারে, তার উদ্দেশ্য বোঝার জন্য। এই বিষয়টা একই ভাবে প্রযোজ্য ঘড়ি, মোবাইল ফোন, গাড়ি অথবা যে কোনো জিনিস যেটা খুব সহজেই সমাজের অন্য মানুষের চোখে পড়ে। অন্তরের উদ্দেশ্যে যদি মানুষ দেখানো মূল হয় তবে সেটা অবশ্যই বিচ্ছিন্ন করতে হবে আল্লাহর সাথে সম্পর্ক বাড়াতে চাইলে। আল্লাহ মানুষের কাছে তোমাদের মর্যাদা ও সন্মান বৃদ্ধি করেন তোমাদের কথা-বার্তা, ব্যবহার, কর্ম ও অবদানের উপর ভিত্তি করে।
(৩.৫) পার্থিব জীবনের সাফল্য: তোমাদের মাপকাঠিতে তোমরা অনেক ধরনের পার্থিব সাফল্য নির্ধারণ করো। যেমন কোনো বিশেষ প্রতিষ্ঠানে চাকরি পেলে তোমরা গর্ব করে বলে বেড়াও আমি এখানে কাজ করি। এটা যদি মানুষকে বলা হয় নিজের মর্যদা ও সন্মান বৃদ্ধির জন্য তাহলে সেটা অবশ্যই পরিত্যাগ করতে হবে আল্লাহর সাথে সম্পর্ক বাড়াতে চাইলে। এই পার্থিব জীবনের সাফল্য বিভিন্ন ধরনের হতে পারে – লেখাপড়া সংক্রান্ত যেমন আমি অমুক নামকরা প্রতিষ্ঠানে পড়ছি বা উচ্চতর ডিগ্রী নিয়েছি। বিশেষ গুণ, খেলাধুলা, আর্থিক, পারিবারিক ইত্যাদি আরো অনেক বিষয়ে যেগুলো শুধু মানুষকে বলে পার্থিব জীবনে নিজের উচ্চতা বৃদ্ধির জন্য হয়, সেটা অবশ্যই ত্যাগ বা বিচ্ছিন্ন করতে হবে আল্লাহর সাথে সম্পর্ক বাড়াতে চাইলে। তোমাদেরকে মানুষকে বলে কয়ে সম্মানের জন্য ছুটতে হবে না। পার্থিব জীবনের সাফল্য আল্লাহর দান, তাই এ ক্ষেত্রে বেশি বেশি করে আল্লাহর শোকর গুজার করলে, আল্লাহ তোমাদের মর্যদা ও সন্মান বৃদ্ধি করে দেবেন। মনে রাখবে, আল্লাহর দেয়া জ্ঞান বা হেদায়েত পাওয়াই হচ্ছে পার্থিব জীবনের সর্বোচ্চ সাফল্য।
(৩.৬) পিয়ার প্রেসার (সমাজের চাপ) : তোমরা অনেক সময় পার্থিব জীবনে অনেক কাজ করো আবার বলো এটা একটা পিয়ার প্রেসার, অর্থাৎ সহকর্মীদের বা সমাজের চাপে করতে হয়েছে। দুনিয়ার মানুষ কি ভাবে (দুনিয়ায় সফলতা দেখানোর স্বার্থে), এ ধরনের চিন্তা পার্থিব জীবনের প্রতি তোমাদের গুরুত্বর দিকনির্দেশনা দেয়। সুতরাং আল্লাহর সাথে সম্পর্ক বাড়াতে চাইলে, এ ধরণের চিন্তা থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করতে হবে। আল্লাহতালা প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার সামর্থ ও যোগ্যতা অনুযায়ী দুনিয়াতে তার জ্ঞান ও নিয়ামত দান করেন। তোমাদেরকে আল্লাহ যে সুবিধা ও সামর্থ দিয়েছেন তোমরা সেটার সঠিক ব্যবহার ও শোকর করে চলবে। আল্লাহর কাছে সে ব্যক্তি প্রিয় যে তার কথা চিন্তা করে কাজ করে।
(৩.৭) প্রতিযোগিতামূলক জীবন: পার্থিব জীবনের সফলতার জন্য প্রতিযোগিতা মূলক হওয়া দরকার। প্রতিযোগিতা থাকলে সফলতা আসে। এ ধারণা সম্পূর্ণ রূপে Principle of Attachment and Detachment (সংযুক্তি এবং বিচ্ছিন্নতার নীতি) – এর বিপরীত। আল্লাহ্ বলছেন পার্থিব জীবনের সাথে বিচ্ছিন্নতার নীতি গ্রহণের মাধ্যমে আল্লাহর সাথে সংযুক্তির নীতি অবলম্বন করতে। আর বর্তমান সমাজে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে পার্থিব জীবনের বিভিন্ন জিনিসের সাথে এটাচমেন্ট বা সংযুক্তি করার কথা বলছে। অন্য মানুষের সাথে যে কোনো ধরনের প্রতিযোগিতা মূলক চিন্তাভাবনা তোমাদেরকে আল্লাহর সাথে সম্পর্ক কমিয়ে দিবে। পার্থিব জীবনের মূলমন্ত্র হচ্ছে সহযোগিতা, প্রতিভা বিকাশ ও তোমাদের অভ্যন্তরীণ গুণ বাস্তবায়ন। Your mindset should focus on demonstrating or actualizing yourself, not competing with others. আল্লাহতালা মানুষকে দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন সহযোগিতা করার জন্য, কোনো প্রতিযোগিতা করার জন্য নয়।
শ্যাই: হুম। অনেক শিক্ষা। উপরে উল্লেখিত দুনিয়ার এটাচমেন্ট গুলোকে যদি বিচ্ছিন্নতার নীতির মধ্যে আনা যায় তাহলে তো মনেও শান্তি ও জীবন চলার পথও সরল হয়ে যায়।
কুকুর: ঠিক তাই। আবার এভাবে চিন্তা করো কুকুরের লালাকে নাপাক বলা হয়েছে। কুকুরের লালা কাপড়ে বা শরীরে লাগলে সেটা পরিষ্কার করে পাক হতে হয়। তেমনিভাবে উপরে উল্লেখিত দুনিয়ার এটাচমেন্ট গুলো তোমাদের থাকলে তোমাদের অন্তর নাপাক হয়ে যায়। সেই অভ্যাস বা কাজ গুলো ত্যাগ করার মাধ্যমে তোমাদের পাক হতে হবে।
শ্যাই: তুমি মানুষ সম্পর্কে এত কিছু জানলে কিভাবে ?
কুকুর: কারণ আমি তোমাদের কাছে থাকি, তোমাদের অনেক কাজকর্ম দেখার সৌভাগ্য হয়। তোমাদের অনেক কিছুকে রক্ষা করি। অনেক সময় তোমাদের থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে তোমাদের কাজে সাহায্য করি। এই আয়াত [৫:৪] আমাকে সাহায্যকারী শিকারী প্রাণী হিসাবে বলা হয়েছে।
শ্যাই: অনেক গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা তোমার কাছ থেকে জানলাম। তোমাকে অনেক ধন্যবাদ। আজ চলি।
কুকুর: ঠিক আছে, তবে যখন কোনো কুকুরের কথা মনে হবে, এই দোয়াটি পড়বে। “রাব্বানা ইন্নানা আমাননা ফাগফিরলানা যুনুবানা ওকিনা আযাবান্নার – হে আমাদের রব! আমরা ঈমান এনেছি, আমাদের গোনাহখাতা মাফ করে দাও এবং জাহান্নামের আগুন থেকে আমাদের বাঁচাও। [৩:১৬].”
শ্যাই: ইনশাল্লাহ, চেষ্টা করবো।
কুকুর: আমার শিক্ষা ভালো লাগলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করো।
শ্যাই: ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে দিবো।
শ্যালো ইনসান সংযুক্তি এবং বিচ্ছিন্নতার নীতি কথা ভাবছে। এটাতো অনেক কার্যকরী নীতি, কিন্তু এটা অনুসরণ করা কঠিন কাজ, তবে আল্লাহ চাইলে সব সহজ হয়ে যায়। তার মনে হলো পাশ দিয়ে কি যেন চলছে, সে লক্ষ্য করলো একটা অজগর সাপ। পিলে চমকে উঠলো..………. চলবে………