ফ্ল্যাশব্যাক – (শ্যালো ইনসান ভাবে গরুর কথাগুলি এবং আশ্চর্য হয় কথার গুরুত্ব নিয়ে। কিছুদূর যেতে সে একটা হাতি দেখতে পায়। মনে মনে ভাবে সূরা বাকারাতে অনেক উপকার আছে, কিন্তু সূরা ফিল, কি আছে ? সেটাতো একেবারই ছোট একটা সূরা, তাও আবার পুরাটাই ঐতিহাসিক ঘটনা। সেটার মধ্যে আবার বর্তমান সময়ের জন্য কি শিক্ষা আছে ? সে সোজা হাতির কাছে গেলো ……)
হাতি দেখতে পায় একজন মানুষ তাকে ডাকছে। হাতি ধীরে ধীরে মানুষটার কাছে আসে। হাতি কাছে আসতেই শ্যালো ইনসান বলে উঠে,
শ্যাই: তোমাকে দেখে আমার একটা গল্প (কোনো সত্য ঘটনা না) মনে পড়লো।
হাতি: বলো, শুনি তোমার গল্প।
শ্যাই: এক নওমুসলিম, নাম জোসেফ আব্রাহাম, সে নতুন ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছে। কিছুদিন আগে এক মসজিদে গিয়ে মাগরিবের সময় ইমাম সাহেবের কাছে সে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে। মাগরিবের নামাজে সে ইমাম সাহেবের পেছনে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়তে শুরু করে। ইমাম সাহেব নতুন একজন কে ইসলাম ধর্মে আনতে সক্ষম হওয়ার আনন্দে সূরা বাকারা পুরাটা পড়ে নামাজ শেষ করেন। নামাজ শেষে ইমাম সাহেব সেই নওমুসলিম কে ইসলামের ঈমান আকিদার তালিম দিতে থাকেন। অবশেষে এশার নামাজের সময় আসলে ইমাম সাহেব বলেন এখন এশার নামাজ শুরু হবে। তখন নওমুসলিম ইমামকে জিজ্ঞাসা করেন মাগরিবের নামাজের সময় কোন সূরা পাঠ করেছেন। ইমাম সাহেব খুশি হয়ে বলেন সূরা বাকারা। বাকারা মানে গরু। এবার নওমুসলিম জিজ্ঞাসা করেন হুজুর এশার নামাজে কোন সূরা পড়বেন। ইমাম সাহেব বলেন সূরা ফিল। ফিল মানে হাতি। তখন নওমুসলিম ঘাবড়ায় যায়, মনে মনে বলে গরুর সূরা যদি এতো দীর্ঘ সময় ধরে পড়ে, তাহলে হাতি যার আকার অনেক বড়ো তার সূরা পড়তে না জানি কত সময় লাগবে। তখন সে বলে, হুজুর আমার বাসায় কিছু কাজ আছে, আমি আরেক দিন নামাজ পড়তে আসবো, আজকে চলি।
হাতি: হা হা হা.., ছাত্র শিক্ষক থেকে শেখে। তোমরা ধর্মের সেন্সে ফজিলত কামাতে গিয়ে কমনসেন্স কি সেটা ভুলে যাও।
শ্যাই: হা হা (মনে মনে ভাবে, হাতিও দেখি কমনসেন্স বুঝে)। টকমে একটা প্রশ্ন করতে পারি?
হাতি : হ্যা, বলো?
শ্যাই: তোমার নামে নাম সূরা ফিল, সেটা তো ছোট সূরা এবং একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। সেটার মধ্যে বর্তমান সময়ে আমাদের জন্য কি শিক্ষা আছে?
হাতি: হু, বলবো। তবে তার আগে ঐতিহাসিক ঘটনাটা কি বলো দেখি?
শ্যাই: আনুমানিক ৫৫০ থেকে ৫৭০ খ্রিস্টাব্দের কোনো এক সময়, তখনকার ইয়েমেনের শাসক ইউসুফ ধু নুয়াস (Yūsuf Dhū Nuwās) পরিখা/গর্ত (trench) এ আগুন দিয়ে খৃস্টান ধর্মে বিশ্বাসীদেরকে তার মধ্যে ফেলে পুড়িয়ে হত্যা করতো। যেটা ইসলামিক স্কলাররা সূরা আল-বুরুজে “people of the ditch” ঘটনার বলে উল্লেখ করেন। আবিসিনিয়ার (বর্তমানে ইথোপিয়া) তৎকালীন খৃস্টান শাসক আবরাহা নামের একজনকে সেনাপতি করে একদল সৈন্য প্রেরণ করে, যাতে ইউসুফ ধু নুয়াস এর হাত থেকে খৃস্টানদের জীবন রক্ষা হয়। আবরাহা যুদ্ধে জয়ী হয়ে ইয়েমেনে তার শাসন প্রতিষ্টা করে।
ঐতিহাসিকভাবে পবিত্র কাবা ঘরে তাওয়াফ কারীদের আগমনের সুবাদে মক্কা ব্যবসা-বাণিজ্যর কেন্দ্রে পরিণত ছিল। বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায় যে, আবরাহা মক্কার মতো ইয়েমেনের শহর সানাকে ব্যবসা-বাণিজ্যর কেন্দ্রে পরিণত করার লক্ষ্যে সেখানে কাবার সদৃশ্য গৃহ নির্মাণ করে। তবে সানা মক্কার মতো ব্যবসা-বাণিজ্যর কেন্দ্রে পরিণত হতে পারে নাই। কেহ বলেন সানাকে ব্যবসা-বাণিজ্যর কেন্দ্রে পরিণত করার লক্ষ্যে আবরাহা মক্কা আক্রমণ ও কাবা গৃহ কে ধ্বংস করার সিদ্ধান্ত নেন, যাতে করে তাওয়াফ কারীরা সানা তে আসেন। মতভেদে কেহ বলেন, আরবের কিছু লোক সানার কাবার সদৃশ্য গৃহে মানুষের বজ্য নিঃসরণ করেন। তাতে আবরাহা রেগে মক্কা আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেন।
সূত্রমতে, হজরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যে বছর জন্ম গ্রহণ করেন সেই বছরেই উনার জন্মের কিছুকাল আগে আবরাহা মক্কা আক্রমণ ও কাবা ধ্বংস করার জন্য বিশাল সৈন্য বহর ও কিছু হাতি নিয়ে ইয়েমেনের সানা শহর থেকে রওনা করে। আবরাহার হাতি ছিল বিশাল আকৃতির ও তার নাম ছিল মাহমুদ।
সংক্ষিপ্ত পরিসরে, ঘটনাটা এরকম ছিল যে হাতি কাবা ঘরের কাছাকাছি এসে বসে পরলো। হাতি কাবা ঘরের দিকে অগ্রসর হয় না কিন্তু বাকি তিন দিকেই যায়। এমতঅবস্থায় আবাবিল পাখি এসে তাদের উপর পাথর নিক্ষেপ করলো। সেই পাথরের নিক্ষেপে আবরাহা ও তার সাথীদের শরীরের মাংস পচে খসে পরে যেতে লাগলো। আবরাহা ও তার সাথীরা ফিরতি পথে সানার উদ্দেশ্যে রওনা দিলো। পথে আবরাহার শরীর পচে গেলো, অবশেষে সানাতে গিয়ে তার মৃত্য হয়।
বাংলায় সূরার অনুবাদ এরকম যে: (১) আপনি কি শোনেন নি, আপনার প্রভু হস্তীওয়ালাদের সাথে কিরূপ আচরণ করেছিলেন? (২) তিনি কি তাদের চক্রান্ত নস্যাৎ করে দেননি? (৩) তিনি তাদের উপরে প্রেরণ করেছিলেন ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি (৪) যারা তাদের উপরে নিক্ষেপ করেছিল মেটেল পাথরের কংকর (৫) অতঃপর তিনি তাদের করে দেন ভক্ষিত তৃণসদৃশ।
হাতি: হুম, অনেক পড়াশুনা করেছো বলে মনে হচ্ছে। ভালো, ভালো।
শ্যাই: তেমন কিছু না। এখন ইন্টারনেটের যুগ, অনলাইন ঘাটলেই অনেক কিছু পাওয়া যায় এবং শেখা যায়।
হাতি: ও আচ্ছা। …তো তুমি কি মনে করো? এর মধ্যে বর্তমান সময়ে তোমাদের জন্য কি শিক্ষা আছে?
শ্যাই: আমিতো বুঝি কাবা শরীফকে আল্লাহতালাই রক্ষা করবেন, কেও তা ধ্বংস করতে পারবেনা। যেমনটি আব্দুল মুতালিব বলেছিলো আবরাহাকে।
হাতি: হুম, তোমার নাম কি?
শ্যাই: আমার নাম শ্যালো ইনসান।
হাতি: ও এবার বুঝেছি।
শ্যাই: মানে?
হাতি: শোনো, পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন স্তরে অর্থ হয়। একমাত্র আল্লাহতালা জানেন সেটার নিগূঢ় সর্বোচ্চ স্তরের অর্থ। তোমাদের যদি কোনো গভীর অর্থ জানতে চাও তাহলে প্রথমে সূরার যে নাম আছে সেটা নিয়ে গভীর ভাবে চিন্তা করো। এই নাম হচ্ছে প্রথম সূত্র যার দ্বারা ভিতরের গভীর বিষয় আনলক করতে হয়। সূরার নাম যেহেতু হাতি, তাই আগে হাতি কি সেটা ভুঝতে হবে।
আমার অর্থাৎ হাতির ৩ টি প্রধান বৈশিষ্ঠ – শারীরিক, মানসিক, চারিত্রিক
প্রথমত: শারীরিক – হাতি আকারে বড়ো এবং শক্তিধর। হাতি ক্ষমতা ও শক্তির প্রতীক।
দ্বিতীয়ত: মানসিক – হাতির আকার অনেক বড়ো, ব্রেইনও মানুষের থেকে তিন গুন বড়ো। কিন্তু বুদ্ধিতে হাতি খুবই দুর্বল। বিশাল আকৃতি সব কিছুকে বড়ো করেনা, বুদ্ধিই মূল, হাতিই উদাহরণ।
তৃতীয়ত: চারিত্রিক – হাতির মেমোরি এত ভালো যে সে কখনো পথ ভুলেনা। হাতি যে পথ দিয়ে যায় সে পথে ফিরে আসে। এজন্য জঙ্গলে হাতির পিঠে চড়লে কেউ পথ হারায় না। হাতি জঙ্গলে যে পথ দিয়ে যায় আবার সেই পথে ফিরে আসে। আবরাহা কে হাতি যে পথে সানা থেকে মক্কা এনেছিল সেই পথে আবার তাকে মক্কা থেকে সানাতে নিয়ে যায়। আমার চরিত্রের এই বৈশিষ্ট্যর জন্য আমাকে তোমাদের স্পিরিচুয়াল বা ‘আত্মিক সত্ত্বার’ প্রতীক বুঝানো হয়েছে।
শ্যাই: সেটা কিভাবে।
হাতি: তোমাদের “আত্মিক সত্ত্বা” বা আত্মা সে জানে তোমরা কথা থেকে এবং কার কাছ থেকে এই দুনিয়াতে এসেছো এবং কোথায় ও কার কাছে ফিরে যাবে। তোমাদের “দেহ সত্ত্বা” দুনিয়াতে এসে ভুলে গেছে তোমাদের যাত্রার শুরু ও শেষ কোথায়। কিন্তু তোমাদের “আত্মিক সত্ত্বা” জানে যাত্রার শুরু ও শেষ। উর্ধ জগৎ থেকে তার আগমণ এবং উর্ধ জগতে তার প্রত্যাবর্তন। হাতি যেহুত পথ ভুলেনা, একারণে হাতিকে “আত্মিক সত্তা”র প্রতীকী হিসেবে বুঝানো হয়। মুসলমানদের জন্য হাতি হচ্ছে তার “আত্মিক সত্ত্বা” যে জানে তাকে পরকালে ফিরে যেতে হবে তার স্রষ্টার কাছে। অর্থাৎ তোমার আত্মিক সত্তায় মনোনিবেশ করবা, যা তোমাদেরকে পরকালে সফল ভাবে পৌঁছে দেবে।
শ্যাই: আচ্ছা, তবে এর সাথে সূরা ফিলের কি সম্পর্ক?
হাতি: এটাই তো চাবি সূরা ফিলকে খোলার জন্য।
শ্যাই: সেটা কিভাবে?
হাতি : শয়তানকে আল্লাহতালা দুনিয়াতে অবকাশ দিয়েছেন। “সে বললো, পুরুত্থান দিবস পর্যন্ত আমাকে অবকাশ দাও। তিনি (আল্লাহতালা) বললেন, অবকাশ দেওয়া হলো। (৭:১৪/১৫)” তাই ইবলিস (শয়তান) দুনিয়ার জীবনকে দীর্ঘ করতে চাই, বিচারের দিন ও পরকালকে ভয় পাই। এজন্য মানুষকে সে দুনিয়ার জীবনের চাকচিক্য দিয়ে ভরে দেয়, যাতে সে দুনিয়ার জীবন নিয়ে ব্যস্ত থাকবে এবং আখেরাত বা পরকাল ভুলে যাবে। এই শয়তান জালে ধরা পরা মানুষরাও দুনিয়াকে খুব ভালোবাসে, মৃত্যুকে ভয় পায়, পরকাল ভুলে যায়। এ ধরণের মানুষদের অবস্থ্যা সমন্ধে আল্লাহ্পাক বলেন, “বেঁচে থাকার ব্যাপারে তোমরা তাদেরকে পাবে মানুষের মধ্যে সবচেয়ে লোভী। এমনকি এ ব্যাপারে তারা মুশরিকদের চাইতেও এগিয়ে রয়েছে। এদের প্রত্যেকে চায় কোনক্রমে সে যেন হাজার বছর বাঁচতে পারে। অথচ দীর্ঘ জীবন কোন অবস্থায়ই তাকে আযাব থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারবে না। যে ধরনের কাজ এরা করছে আল্লাহ তার সবই দেখছেন। (২:৯৬)”
পরকাল হচ্ছে ইসলাম ধর্মের একটা প্রধান স্তম্ভ, পিলার। আল্লাহতালা হজরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে আখেরি নবী বানানোর মধ্যে এই বার্তা দিলেন যে এরপর আর কোনো মেসেঞ্জার আসবেন না, আসবে কেয়ামাত ও আখেরাত। সুতরং মুসলমানদেরকে বারবার স্মরণ করে দেয়া হয়েছে পরকাল সম্পর্ক। অন্য সকল ধর্ম থেকে ইসলাম ধর্মের অন্যতম পার্থক্য হলো পরকালের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস। কোরআন শরীফে বারবার বলা হয়েছে মৃত্যুর পর জীবন ও পরকাল সম্পর্কে। একজন মুসলমান যেন সর্বদা পরকালের জন্য তৈরী থাকে। দুনিয়ায় মুসলমানের সকল কাজ যেন পরকালের আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হয়। মুমিনের দুনিয়ার জীবন একদম সাময়িক কিন্তু পরকাল চিরস্থায়ী। আল্লাহতালা হজরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কেবলা কাবার দিকে করার মধ্যে সংবাদ দেন এখন ফেরার পথ শুরু হলো। অনেকে ব্যাখ্যা করে বলেন যে কাবা শরীফ পয়েন্ট করে আখেরাতের দিকে আর জেরুজালেম পয়েন্ট করে দুনিয়ার দিকে। যেহেতু শয়তান দুনিয়ার জীবনকে দীর্ঘ করতে চাই, পরকালকে ভয় পাই। তাই সে দুনিয়াতে আখেরাতের সমস্ত আলামতকে ধ্বংস করতে চায়।
শ্যাই: তুমি বলতে চাও সূরা ফিলের সাথে আখেরাতের সমস্ত আলামতকে ধ্বংসের সম্পর্ক আছে। সেটা কিভাবে?
হাতি: দ্বিতীয় চাবি (clue) – আবরাহার হাতির নাম “মাহমুদ”।
সূরা ফিল এ আবরাহা ছিল শয়তানের প্রতীক, হজরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ও কাবা শরীফ ছিল পরকালের আলামত। এটা বুঝার লিংক টা হচ্ছে আবরাহার হাতির নাম “মাহমুদ”। মাহমুদ এর মূল শব্দ হচ্ছে Ḥ-M-D, যেটা মুহাম্মদ এবং আহমদ এর মূল শব্দ। ‘আহমদ’ হচ্ছে নবী (সা:) স্পিরিচুয়াল বা উর্ধ জগতের নাম আর মুহাম্মদ হচ্ছে উনার দুনিয়ার জগতের নাম।
শয়তান ছাড়া আর কারো পক্ষে জানা সম্ভব ছিলোনা যে আহমদের আগমন খুব নিকটে। কোরআন নাজিল হওয়ার আগে পর্যন্ত শয়তান উর্ধাকাশে গিয়ে ফেরেস্তাদের কথা শুনতো। আল-কোরআন নাজিল হওয়ার পর তা বন্ধ হয়ে গেছে। এ বিষয় অনেক সূরাতে উল্ল্যেখ আছে, যেমন সূরা আল-জিন ৭২: ৮-৯, আল হিজর ১৫: ১৬-১৮, আল মুলক ৬৭:৫ ইত্যাদি। যেহুত শয়তান উর্ধ জগতে আড়িপেতে শুনতো, তাই সে সম্ভবত আহমদের আগমন জানতে পেরেছিলো এবং পরে তা আবরাহার মাথায় ঢুকিয়ে দিয়েছে। তাছাড়াও আবরাহা যেহেতু খৃস্টান ছিল সে হয়তো ‘আহমদ’ সম্পর্কে জানতো। তাই আবরাহা (শয়তানের প্রতীক) হাতির নাম “মাহমুদ” দিয়ে বুঝতে চাইলো মাহমুদ কে দিয়ে শুধু কাবা ঘর না আহমদকেও ধ্বংস করা হবে, সেই সাথে আখেরাতের আলামত মুছে ফেলা হবে। “মাহমুদ” নামটি উপহাস করার অর্থে রাখা হয়েছিল।
শ্যাই: থামো থামো। একটু ডাইজেস্ট করতে দাও। তুমি বলতে চাও, শয়তান বা আবরাহা শুধু কাবা না আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কেও ধ্বংস করতে চাইছিলো। এর স্বপক্ষে তোমার যুক্তি কি?
হাতি: যুক্তি হলো – “(২) তিনি কি তাদের চক্রান্ত নস্যাৎ করে দেননি?” সূরার এই আয়াতে কাবার নাম উল্লেখ না করে ‘চক্রান্ত’ বলা হয়েছে। ইনফ্যাক্ট “কাবা” শব্দটি সূরার কোথাও নেই। হাতির নাম “মাহমুদ” ও শব্দ “চক্রান্ত” এ থেকে আমি এই সিদ্ধান্তে উপনটি হয় যে তারা শুধু কাবা ঘর না, প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ধ্বংস করতে চেয়েছিলো। আল্লাহতালার ওয়াদা কিয়ামত হবে পরকাল আসবে, এবং সময় নির্দিষ্ট আর এগুলোর প্রতীক নবী (সা:) ও তার কিবলা, সেটাতে শয়তান আঘাত করতে চেয়েছিলো আব্রাহাকে দিয়ে।
শ্যাই: তোমার কোথায় যুক্তি আছে। আচ্ছা এখন বলো ওই ঘটনা ও হাতি থেকে আমরা কি শিক্ষা গ্রহণ করতে পারি?
এই সূরা ফিল থেকে বর্তমান সময়ের তোমাদের জন্য ২টি মূল শিক্ষা ও ১টা অতিরিক্ত শিক্ষা হাতি থেকে-
১) পরকাল অবিশ্যম্ভাবী এবং সময় নির্দিষ্ট, আল্লাহতালা তার ওয়াদা থেকে কখনো বিচ্যুত হন না। আল্লাহতালার ওয়াদা (কিয়ামত ও পরকাল) নিয়ে উপহাস করবা না, তাহলে তুমি নিজেই ধ্বংস ও উপহাসের পাত্র হবা।
২) তোমাদের জীবনে ফোকাস থাকতে হবে “আত্মিক সত্ত্বা” যার গন্তব্য পরকালের দিকে। দুনিয়ার জীবনের সকল কর্মই আল্লাহর সন্তুষ্টি ও আখেরাতের মুক্তির উদ্দেশ্যে। হাতির পিঠে উঠে জঙ্গল দিয়ে গেলে যেমন নেকড়ে, বাঘ, সিংহ ও সাপ তাকে স্পর্শ করতে পারে না। তেমনিভাবে, আত্মিক সত্ত্বায় বলীয়ান অর্থাৎ মনের জগতের উচ্চতায় (হাতির পিঠে) উঠলে, দুনিয়ার মোহো (নেকড়ে), ক্রোধ (বাঘ/সিংহ), ইগো/অহংকার (সাপ) তাকে স্পর্শ করতে পারে না। (চিন্তার বিষয়, রিফ্লেক্ট)
৩) দেখো আমার দেহ বড়ো কিন্তু বুদ্ধি কম, তাই সার্কাসের রিং মাস্টার আমাকে নাচায়, খেলায় তোমাদের বিনোদন দেয়। আমার এই দুর্বল কর্ম টা, যেটা আরেকজনের বিনোদনের জন্য হয়, সেটা তোমার পরিত্যাগ করবা। এখানে সার্কাসে আমার ভূমিকা থেকে তোমাদের জন্য শিক্ষা, বর্জন হিসেবে।
শ্যাই: মানুষের মধ্যে করা তোমার মতো সার্কাসের রিং মাস্টারের কোথায় নাচে?
হাতি: ৩.১) এইযে তোমরা যাকে বলো নায়ক-নায়িকা। পর্দার এপারে হাতির মতো উঁচুস্তরের লাগে, আর পর্দার ওই পারে ডিরেক্টর/প্রোডিউসার রিং মাস্টারদের কোথায় ঢিসুম-ঢুসুম, আর শরীরের ঝাকুনি ও দুলানির সার্কাস করে মানুষকে শুধু বিনোদন দেয়। শিক্ষা ছাড়া শুধু বিনোদনের জন্য নাচা-নাচি করবা না, অর্থাৎ সার্কাসের হাতির মতো আচরণ করবা না।
৩.২) এখন অনলাইনে প্রচুর পোস্টিং দেখি – শুধু হাসি তামাশা, চুলকানি, ঝাকুনি, যা অর্থহীন বিনোদনের জন্য। শিক্ষা ছাড়া শুধু বিনোদনের কোনো মূল্য নেই। এধরণের পোস্টিংও হচ্ছে সার্কাসের হাতির মতো আচরণ, যার রিং মাস্টার হচ্ছে তার প্রবৃত্তি। নিজের প্রবৃত্তিকে কন্ট্রোল করতে শেখো, লাগামহীন ভাবে ছেড়ে দিলে সে তোমাকে সার্কাসের হাতি বানাবে।
৩.৩) ফেসবুকসহ অনেক অনলাইন মিডিয়াতে অনেকে সারাক্ষণ আল্লাহর কথা বলে। ভালো, তবে তারা কি আল্লাহর সাথে কথা বলে? আগে আল্লাহর সাথে কথা বলো, তারপর আল্লাহর কথা বলো । যারা নিজে আল্লাহর সাথে কথা বলেনা অথচ অন্যকে সারাক্ষণ আল্লাহর কথা বলে, তাদের আচরণ সার্কাসের হাতির মতো। সাবধান, তোমরা ধর্মের সেন্সে ফজিলত কামাতে গিয়ে কমনসেন্স ভুলে যেওনা।
শ্যাই: অনেক কথা হলো। তোমার সাথে কথা বলে ভালো লাগলো। আজ তাহলে যাই।
হাতি: ঠিক আছে তবে যখন কোনো হাতি দেখবা বা হাতির কথা শুনবা তখন এই দোয়াটি পড়বা। “…রাব্বানা ওয়ীলাইকাল মাসীর – হে প্রভু! তোমারই দিকে ফিরে যেতে হবে। (২:২৮৫)
শ্যাই: চেষ্টা করবো।
হাতি: আরেকটা কথা, আমার শিক্ষা ভালো লাগলে বন্ধুদের কাছে শেয়ার করো।
শ্যাই: ফেইসবুক পোস্ট দিয়ে দিবো।
শ্যালো ইনসান হাতির কথাগুলি ভাবতে থাকে। অনেক বন্ধুর কথা মনে পরে যাদের সাথে সে হাতির শিক্ষা শেয়ার করতে চায়। এই ছোট একটা সূরা হাতির মধ্যে এত শিক্ষা, তাহলে সূরা বাকারা, গরু। নিজেকে নিরেট মূর্খ মনে হতে লাগলো। যাক, ছোট ছোট পথ ধরেই সামনে আগাতে হবে। তাই এবার এমন প্রাণীর কাছে যাবো যার নামে কোনো সূরা নেই। কিছুদূর যেতেই সে একটা উট দেখতে পায়। ………. চলবে………